জন্মদিন পালন ও আমাদের করণীয়

 যারা খুব আয়োজন করে জন্মদিন উদযাপন ও জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, তাদের জন্য সংগৃহীত একটি উপদেশনামা:



এক.

জন্মদিনে কি শুভেচ্ছা জানানোর কথা, নাকি সতর্কবার্তা দেয়ার কথা? ধরুন আপনি পাঁচশত টাকার মালিক। এর মধ্য থেকে একশত টাকা হারিয়ে ফেললেন। তখন কি কেউ আপনাকে অভিনন্দন দেবে? তিন ঘন্টার পরীক্ষায় প্রত্যেক ঘন্টা পর পর যে ঘন্টার ধ্বনি বাজানো হয় তা কি শুভেচ্ছা বার্তা? নাকি পরীক্ষার্থীর জন্য সতর্কবার্তা? সময় যত শেষের দিকে আসে প্রত্যবেক্ষকগণ ততই সতর্ক করতে থাকেন। আর ১৫ মিনিট.. আর ৫ মিনিট... লাস্ট মিনিট...। এভাবে পরীক্ষার্থীকে বার বার সতর্ক করা হয়। অথচ জন্মদিনে আমরা করছি উল্টোটা।


*দুই.* 

পরীক্ষার হলে যতই সময় শেষ হতে থাকে পরীক্ষার্থী কি ততই উৎফুল্ল হতে থাকে? নাকি ততই সে আরো সতর্ক হয়ে দ্রুত লেখা শেষ করার দিকে ধাবিত হয়? জীবনের এ পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ায় তো দুনিয়ার পরীক্ষার চেয়ে হাজারোগুণ বেশি টেনশন করার কথা। কারণ, এ পরীক্ষায় তো কোন ইমপ্রুভমেন্ট দেয়ার সুযোগ নেই। নতুন করে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। এ পরীক্ষার ফল জান্নাত অথবা জাহান্নাম। এ রেজাল্টের বিকল্প অন্য কোন ব্যবস্থা বেছে নেয়ার সুযোগ নেই। যেটা দুনিয়ায় আছে। দুনিয়ায় কেউ পরীক্ষায় ফেল করলে বিকল্প পেশার সুযোগ আছে। প্রেসিডেন্ট থেকে ভিক্ষুক পর্যন্ত সকল পেশা একটা আরেকটার বিকল্প। কিন্তু আখিরাতের পরীক্ষায় কেউ ফেল করলে জাহান্নামে না যেয়ে বিকল্প কোন ব্যেবস্থা বেছে নিতে পারবেন? ফেল করলেই তো অনন্তকালের জাহান্নাম।


*তিন.* 

এটা এমন পরীক্ষা যার পাশের ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত না। এ পরীক্ষার সম্পুর্ণ সময়টাও যদি কেউ কাজে লাগায়, তবুও সে পাশ করবে এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। ইউনিভার্সিটি শিক্ষক-ক্লাবে একদিন কয়েকজন স্যার অন্য একজন স্যারের ব্যাপারে কথা বলছিলেন। উনি অসুস্থ। এ অবস্থায় উনি নাকি মরণের ব্যাপারে ভয় করছেন। হঠাৎ একজন স্যার বললেন, “বল তো মিজান, মরার জন্য ভয়ের কি আছে? কেন মরণের ভয় করব? আমি কি অপরাধী?” আমি বিস্ময়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কারণ,আমার জানামতে উনি এক ওয়াক্তও নামায পড়েন না। অথচ মৃত্যুর ব্যাপারে কত নির্ভয়!! আমার শুধু ইবনুল কায়্যিম (রহ.) এর উক্তিটা মনে পড়ছিল; তিনি বলেন, “কম লোকই প্রস্থানের জন্য সম্বল সংগ্রহ করছে। যে দেশে সে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে সে দেশের ব্যয়ভার সম্পর্কে স্বল্প জ্ঞানের কারণে তারা এমনটা করে। সজাগ ও সচেতন লোকেরা সে দেশের উপকারী বিষয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়, পুঁজি বাড়ায় এবং ব্যবসায় লাভবান হয়। উদাসীন লোকেরা সামান্যই পুঁজি সংগ্রহ করে, কেউ খালি হাতও থাকে।”



*চার.* 

আমার মনে হয় জন্মদিনে কিছু সতর্কবার্তা পাঠানো যেতে পারে । পরীক্ষার্থীর প্রত্যেক ঘন্টা চলে যাওয়ার পর অভিনন্দন জানানো- এটা কেমন যেন লাগে। আর এমন পরীক্ষার্থী যার পাশের ব্যাপারে আপনি তো জানেনই না, বরং পরীক্ষার্থী নিজেও জানে না। তাহলে এই শুভেচ্ছা বার্তায় সে পুলকিত হবে কি করে? প্রতিদিন যদি একটা করে পাপ আমলনামায় যোগ হয় তাহলে বছর শেষে কী জানানো উচিত? শুভেচ্ছা, নাকি সতর্কতা? আবু বকর আল-কাত্তানী বলেছেন- এক ব্যক্তি আত্মসমালোচনা করে দেখলেন যে, তার বর্তমান বয়স ষাট বছর। ২১৫০০ দিন। প্রতিদিন যদি একটা করেও পাপ হয়ে থাকে তাহলে ২১৫০০ পাপ হয়েছে। এটা চিন্তা করে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরলে লোকেরা অজ্ঞান হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি দুনিয়া আবাদ করেছি এবং পরকাল বরবাদ করেছি।’

 

*পাঁচ.* 

জন্ম দিবসে মনে হয় শুভেচ্ছার চেয়ে আমরা সতর্কবার্তা দেয়া চালু করতে পারি। যেমন- আল্লাহর এই বাণী দিতে পারি- আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍۢ “প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের (আখিরাত) জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে।”(সূরা হাশর-১৮)। অথবা হাদীসের এই বাণী দিতে পারি- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- *“মানুষের মধ্যে উত্তম হচ্ছে সে ব্যক্তি, যার বয়স দীর্ঘ হয় এবং সাথে সাথে তার আমল সুন্দর হয়। আর মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট হচ্ছে সে ব্যক্তি, যার বয়স দীর্ঘ হয় এবং সাথে সাথে আমল নিকৃষ্ট হয়।”*(তিরমিযী-২৩৩০) আল্লাহ আমাদের দীর্ঘ হায়াত দান করুন এবং সাথে সাথে সুন্দর কর্মে আমাদের আলনামা ভারী করার তৌফিক দিন।

Comments